তালিকা

আধুনিক বাঙালির ফেভারিট লোকেশ
ঢাকার রাজপথে অনিশ্চয়তার দেওয়াল লিখন

  

 

ঢাকা থেকে ফিরে

-যা দেখলেন, তাই লিখবেন। এইটুকুই অনুরোধ। আমার নাম লিখবেন না।

বললেন, বিএনপির এক মস্তবড়ো নেতা। নাম লেখা বারণ, তাই তাঁর পরিচয় গোপনই রাখলাম।

-কিন্তু দেখলামটা কী? কী শুনলাম?

বড়ো প্রশ্ন। ঢাকা শহর দৃশ্যত আগের মতোই রয়েছে। যানজট রয়েছে, রয়েছে মানুষের চলাফেরাও। বদলেছে শুধু দেওয়াল লিখন। দেওয়ালে দেওয়ালে ফ্যাসিবাদ বিরোধী গণঅভ্যুত্থানের স্মারক। আওয়ামি লিগের বিরুদ্ধে ক্ষোভ। পোস্টারে, ব্যানারে বা দেওয়াল লিখনে কোথাও নেই শেখ মুজিবুর রহমান, শেখ হাসিনা বা আওয়ামি লিগের নামগন্ধ। এমনকি, জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া বা তারেক রহমানকে নিয়েও উচ্ছ্বাস চোখে পড়েনি। তবে, তাঁরা আছেন, এখনও গণঅভ্যুত্থানের উদ্ভাসে অনুজ্জ্বল।

জনজীবন আপাত স্বাভাবিক। আগের মতোই ব্যস্ততার ছবি সর্বত্র। সেই ব্যস্ততার মধ্যেও অনিশ্চয়তার ছাপ। পুলিশ বা সরকারি আমলারাও সেই ছাপ থেকে মুক্ত নন। ছাপ রয়েছে ৩২ ধানমন্ডি, গুলসান ২, বাংলা মোটর এবং মগবাজারেও। কাল কী হবে, সেই পরিচিত প্রশ্নের  উত্তর অজানা! কাল কী হবে? কেউ জানেন না, এটাই দেখলাম, শুনলামও সর্বত্র।

৩২ ধানমন্ডি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে স্মৃতিবিজড়িত বাসভবন। আওয়ামি লিগের কাছে তীর্থস্থান। এখন পোড়া ধ্বংসস্তূপ। চারিদিকে পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ। রয়েছে শক্ত ব্যারিকেড। ছবি তোলা তো দূর অস্ত, দেখারও জো নেই। দলের নেতারা কেউ জেলে তো, কেউ আড়ালে। কর্মীদেরও সমাজ মাধ্যমেই দেখা মিলছে। 'নৌকাডুবি'র পর কেউ আর সাহস করছেন না গা ঝাড়া দেওয়ার। মাঝে মাঝে তবু ঝটিকা মিছিল জানান দেয় তাঁদের অস্তিত্ব। জনশ্রুতি--- অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ব্যর্থতা হয়তো ফের তাঁদের প্রত্যাবর্তনের পথ খুলে দেবে। কিন্তু জনশ্রুতি বা জল্পনাতেও তেমন জোশ নেই! তবু কানে এল, ‘হ্যায় বেডিও অনেক কাম করছিল!’

গুলশন ২। বিএনপি চেয়ারপার্সন তথা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কার্যালয়। তাঁর ছেলে, দলের কো-চেয়ারপার্সন তারেক রহমান লন্ডনে। তাঁর প্রত্যাবর্তন কবে হবে সেটা স্পষ্ট নয়। কাতারের রাজপরিবারের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে চেপে মঙ্গলবার ঢাকায় ফেরেন খালেদা। তবে তাঁর ছেলে, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আসেননি। এসেছেন তাঁর স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান ও জিয়া পরিবারের আরেক বধূ সৈয়দা শর্মিলা রহমান। ব্যাপক উৎসাহ দেখা গিয়েছে তাঁদের প্রত্যাবর্তনে। সঙ্গে প্রশ্নও, কবে ফিরবেন তারেক রহমান? বিএনপির দাবি দ্রুত নির্বাচন।কিন্তু সেই দাবি কবে পূরণ হবে? কোনো নিশ্চয়তা নেই। খালেদাকে পেয়ে উচ্ছ্বাসের মধ্যেও দলীয় কর্মীদের মুখে হতাশার ছাপ স্পষ্ট। ছাপ আত্মবিশ্বাসে অভাবেরও। টাল খাচ্ছে দ্রুত ক্ষমতায় ফেরার স্বপ্ন।

বাংলা মোটরের রূপায়ণ টাওয়ারের ১৫ তলায় জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপির সদর দপ্তর। একঝাঁক তরুণ মুখ সেখানে। তাঁদের চোখেমুখে এখনও যুদ্ধজয়ের তৃপ্তি। সঙ্গে ব্যস্ততা এবং স্ববিরোধিতা। সেখানে বসেই দলের যুগ্ম সদস্য সচিব লুৎফুর রহমান জানালেন, আগে বিচার পরে ভোট। এটাই তাঁদের নীতি। কারণ তাঁরা জুলাইয়ের হতাহতদের কাছে দায়বদ্ধ। তাঁরা চান রাষ্ট্রসংস্কার। ফ্যাসিবাদ আর যাতে ফিরে আসতে না পারে, সেটাই তাঁদের লক্ষ্য। বিএনপি ভোট চাইলেও ‘এত বছরে তারা যে আওয়ামি লিগকে হারাতে পারেনি’ সেটাও মনে করিয়ে দেন তিনি।

মগবাজারে রেলগেটের পাশেই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামির কেন্দ্রীয় কার্যালয়। তারা এখন অনেক বেশি সাবলীল। ভারতীয় গণমাধ্যমে ‘অপপ্রচার’ চললেও দলের সহকারী মহাসচিব এ এইচ এম হামিদুর রহমান আজাদ জানালেন, তাঁরা মোটেই ভারত-বিদ্বেষী বা পাকিস্তানপন্থী নন। বরং বাংলাদেশপন্থী। হিন্দু বিদ্বেষও তাঁদের নেই। বরং হিন্দুরা অনেকেই এখন তাঁদের দলে নাম লেখাচ্ছেন। জঙ্গিদের সঙ্গেও তাঁদের কোনও সম্পর্ক নেই। জামায়াতের প্রচার সচিব মতিউর রহমান আকন্দ ভারতীয় জনগণের সঙ্গে আরও ভালো সম্পর্কের কথা বললেন। শোনালেন ন্যায্যতার ভিত্তিতে দিল্লির সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার কথা। তাঁরা সংস্কারের পক্ষপাতী বলে দাবী করলেন।

রাজনৈতিক দলগুলিই নির্বাচন কবে হবে তা নিয়ে অনিশ্চিত। এমনকী, ডিসেম্বর ডেটলাইন দিয়েও বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান নিজেই এখন নীরব। ড. মুহাম্মদ ইউনূস বছর খানেকের মধ্যে ভোটের ইঙ্গিত দিলেও তাঁর সমর্থকরা অনেকেই আরও ৪ বছর ক্ষমতায় থাকতে চান।

তাই নির্বাচিত সরকার কবে আসবে, অনিশ্চিত। তবে নির্বাচনী উত্তেজনার চোরাস্রোত রয়েছে সর্বত্র। তাই বাঙালির চিরপরিচিত রাজনৈতিক হিংসা ও হানাহানির খামতি নেই। তারই শিকার হচ্ছেন সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরু উভয়েই। আর চীন ও পাকিস্তানি পণ্যে ছয়লাপ ঢাকার পোশাক বাজার। ভারতীয় পণ্যের চাহিদাও কি শেষ? শক্ত প্রশ্ন। তবে উগ্র ভারত বিরোধিতা কানে বাজেনি। প্রকাশ্যে বিদ্বেষ এখন শুধু ভারতীয় মিডিয়ার বিরুদ্ধেই!

ছবিঃ সংগৃহীত

                                                                   


সাবস্ক্রাইব
অবহিত করুন
guest
0 টি মন্তব্য
ভোটপ্রাপ্তি অনুসারে
নতুন থেকে পুরোনো পুরোনো থেকে নতুন
ইনলাইন প্রতিক্রিয়া
সকল মন্তব্য দেখুন
Scroll to Top