তালিকা

আধুনিক বাঙালির ফেভারিট লোকেশ
মায়াবী মিশর


এবারে পুজোর ছুটিতে কোথায় যাওয়া যায় সেই নিয়ে কথা হচ্ছিল। এখন তো বেশ আগে থাকতেই সব ঠিক করতে হয়। রবিবার, তাই সবাই ছুটির মেজাজে ।

সেই সময়ে ফোন করল পলাশ। পলাশ হল বিখ্যাত ভ্রমণসংস্থা কক্স এন্ড কিঙের একজন ম্যানেজার। খুব ভালো, আর ব্যবহারও দারুণ।

এবারে পুজোয় কোথায় যাবেন ঠিক করেছেন ? বলল সে।

না, এখনও ঠিক করা হয়নি।

তাহলে ইজিপ্টে চলুন না। খুব ভালো ট্যুর হবে।

ঠিক আছে, কথা বলে জানাচ্ছি।

নীলাঞ্জনা আর রূপকথাকে বলতে তারা তো এককথায় রাজি। আসলে মিশর বা ইজিপ্টের একটা আলাদা আকর্ষণ আছে। আমি পলাশের সঙ্গে কথা বলে নিলাম।

বাড়িতে খুশির হাওয়া ।

কী মজা, পিরামিড দেখব, মমি দেখব ! বলে উঠল রূপকথা ৷

আমাদেরও বেশ আনন্দ হল।

ধীরে ধীরে যাওয়ার সময় এসে গেল। কিছু টাকা ওখানকার মূদ্রা, ইজিপসিয়ান পাউন্ডে পরিবর্তিত করে নেওয়া হল। দশমীর দিন যাওয়া, কাতার এয়ারলাইন্সের বিমানে। এই সফরে আমাদের ম্যানেজার অভিজিত। সে সবাইকে জড়ো করছিল। কাতারে খানিকক্ষণ হল্ট। কাতার এয়ারপোর্ট একটু ঘুরে দেখা হল। তারপর কানেক্টিং ফ্লাইটে ইজিপ্ট বা যিশর। সেই স্বপ্নের দেশ।

কায়রো এয়ারপোর্ট থেকে বেরোনোর পর একটা বাসে ওঠা হল। মাঝখানে লাঞ্চ করে নেওয়া হল একটা ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টে । সবারই বেশ খিদে পেয়ে গেছিল। খাওয়া ভালোই। খানিক পরেই আমরা পৌঁছে গেলাম আমাদের নির্দিষ্ট হোটেলে ।

খুব সুন্দর হোটেলটা। অনেক কটেজ রয়েছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। আমরা ঢুকে গেলাম আমাদের কটেজে। হাত পা খেলিয়ে শুয়ে পড়লাম। কিন্ত সে বেশিক্ষণের জন্য নয়। বেরোতে হবে লাইট এন্ড সাউন্ড শো দেখার জন্য। বাসে করে আমরা গিয়ে পৌঁছলাম একটা বড় মাঠে। সেখানে পরপর বেঞ্চ পাতা রয়েছে । আমরা গিয়ে বসলাম সেখানে। অনেক বিদেশীও রয়েছেন।

একটু পরেই শুরু হল লাইট এন্ড সাউন্ড শো। কিছুটা দূরে রয়েছে তিনটে বড় পিরামিডের মডেল । তাদের ওপরে আলো এসে পড়ছে, আলোর রঙ পরিবর্তিত হচ্ছে। কেমন যেন আলো আঁধারির খেলা। একজন মিশরের ইতিহাস সম্পর্কে বলে চলেছেন। হাওয়া দিচ্ছে বেশ। এক মায়াবী পরিবেশ। আমরা যন্ত্রমুগ্ধের মত দেখছি আর শুনছি।

শো শেষ হতে উঠে পড়লাম আমরা। সবারই খুব ভালো লেগেছে। এবারে রাতের খাওয়া সারা হল আর এক ভারতীয় রেস্টুরেন্টে। তারপর হোটেলে ফেরা।

কটেজে ঢুকে নীলাঞ্জনা বলল, আমার খুব ভালো লেগেছে।
আমারও। বলল রূপকথা ৷

এবারে ঘুমিয়ে পড়লাম আমরা । কাল যাওয়া হবে আলেকজান্দ্রিয়ায় ।

পরদিন সকালে ব্রেকফাস্ট সেরে রওনা দিলাম আমরা। অভিজিত পরিচয় করিয়ে দিল লোকাল ম্যানেজার আহমেদের সঙ্গে। সে বেশ হাসিখুশি আর চটপটে লোক।

সবাই যে যার পরিচয় দিল। বেশিরভাগই বাঙালি । এর মধ্যে গানটান হল। রূপকথাও গান গাইল।

এখন আমরা একটা পরিবারের মত। বলল অভিজিত।

এখানে আসার আগে আমি একটু পড়ে নিয়েছিলাম মিশর সম্পর্কে । মিশরীয় সভ্যতা এক অতি প্রাচীন সভ্যতা । প্ৰায় পাঁচ হাজার খ্রিস্টপূর্বাব্দে নানা মানুষ এসেছিল এই জায়গায়, এখনকার প্যালেস্তাইন, সিরিয়া, লিবিয়া, প্রভৃতি জায়গা থেকে। তাদের মধ্যে কিছু লোক এখানকার উর্বর মাটির আকর্ষণে থেকে যায়। তারা চাষবাস এবং পশুপালন শুরু করে এবং মাটির বাড়ি তৈরি করে বসবাস শুরু করে । তারা মৃত্যুর পরবর্তী জীবনে বিশ্বাসী ছিল।

মিশর অবস্থিত আফ্রিকার উত্তর পূর্ব অংশে। এই দেশের এক বড় সম্পদ হল তার নদী, নীলনদ। মিশরের ইতিহাসকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়- ওল্ড কিংডম, মিডল কিংডম আর নিউ কিংডম। প্রাচীন মিশরের দুটি প্রধান রাজধানী শহর ছিল মেমফিস ও থেবেস। মেমফিস ছিল প্রথম রাজধানী, যা স্থাপন করেছিলেন রাজা মেনেস। থেবেস রাজধানী ছিল মিডল ও নিউ কিংডমের সময়।

প্রাচীন মিশরের জীবনযাত্রা মূলত কৃষিকার্যের ওপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছিল। প্রধান শস্য ছিল গম, এছাড়াও ছিল ফল ও শাকসব্জি। আরও জন্মাত ফ্ল্যাক্স নামক এক ধরনের গাছ, যাতে নীল রঙের ফুল হত, যার থেকে মিশরীয়রা জামাকাপড় তৈরি করত। তাদের রাজাকে বলা হত ফ্যারাও।

এবারে আমরা এসে পৌঁছলাম আলেকজান্দ্রিয়ায় ৷ এবারে আলেকজান্দ্রিয়া দর্শন । এটি মিশরের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর এবং পর্যটকদের জন্য এক দারুন আকর্ষণ। গ্রিক সম্রাট আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট এই নগরীর পত্তন করেন।

প্রথমেই দেখা হল ক্যাটাকম্বস, যা ছিল এককালের সমাধিস্থল। এটি নির্মিত হয় দ্বিতীয় শতকে। এখানে রয়েছে সমাধি, মূর্তি এবং ভাস্কর্যের নিদর্শন। সবকিছুতেই রয়েছে মিশরীয়, গ্রিক ও রোমান ধারার মিশ্রণ। রয়েছে এক বৃত্তাকার সিঁড়ি। তিনটি স্তর আছে। রয়েছে আনুবিসের ছবি, যিনি মৃতদেহকে সমাধিস্থ করার জন্য প্রস্তুত করছেন।

সবাই বেশ ভালো করে পর্যবেক্ষণ করছে। লোকাল গাইড আহমেদ বর্ণনা করছে জায়গা সম্পর্কে। এখানে ফটো তোলা বারণ।

১৯৯০ সালে এই জায়গাটি আবিষ্কৃত হয়, চরতে আসা একটি গাধা এখানে পড়ে যাওয়ার পরে। তখন মাত্র তিনটি সারকোফেগাস , অর্থাৎ মৃতদেহের আধার পাওয়া যায়। সেগুলি এখনো এখানে রাখা আছে। এছাড়াও পাওয়া যায় মানুষ ও জীবজন্তুর হাড়গোড়।

এক জায়গায় রয়েছে ঘোড়ার হাড়গোড়। এগুলো নাকি ছিল সম্রাট কারাকাল্লার ঘোড়ার হাড়। এই জায়গাকে বলা হয় হল অফ কারাকাল্লা।

এসব দেখতে ভালো লাগছে না, বলল নীলাঞ্জনা।
হ্যাঁ কেমন যেন এক ভুতুড়ে পরিবেশ। বললেন মিসেস রায় চৌধুরী।
আমার কিন্তু দেখতে বেশ ভালোই লাগছে, বললাম আমি।

বেশ খানিকক্ষণ সেখানে কাটিয়ে আমরা বেরিয়ে এলাম সেখান থেকে।

এবারে দেখা হল পম্পেইজ পিলার। এটি প্রকৃতপক্ষে এক রোমান বিজয় স্তম্ভ, যা নির্মিত হয়েছিল রোমান সম্রাট ডায়োক্লেটিয়াসের সম্মানে ।

এখানে একসময় সম্রাটের মূর্তি ছিল যা পরে ভেঙে যায়। এবার লাঞ্চ করার জন্য যাওয়া হল একটা রেস্টুরেন্টে। খাবারের অর্ডার দেওয়া হল। সামনে জানলা দিয়ে দেখা যাচ্ছে ভূমধ্যসাগর। জাহাজ ভাসছে জলে।

এই রেস্টুরেন্টে মাছ রাখা আছে, যেটা বলা হবে রান্না করে দেবে। খাওয়া দাওয়া করতে করতে সন্ধ্যে হয়ে গেল। এরপর দেখা হল মনতাজা গার্ডেন আর মনতাজা প্যালেস। গার্ডেনটা খুব সুন্দর। প্যালেস বাইরে থেকেই দেখা হল আর ছবি নেওয়া হল। আমরা খানিকক্ষণ ঘুরে বেড়ালাম আর গল্প করতে লাগলাম।

খুব সুন্দর জায়গা, রূপকথা বলল।
আমারও বেশ ভালো লাগছে, বলল নীলাঞ্জনা।

এরপর একটা ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টে গিয়ে রাতের খাবার খেয়ে হোটেলে।

পরদিন সকালে ব্রেকফাস্ট সেরে নিয়ে আমরা চললাম পিরামিড দেখার জন্য । মিশরের সেই বিখ্যাত পিরামিড। আশ্চর্য সুন্দর সৃষ্টি। এতদিন খালি বইতে পড়েছি এর কথা, আর ছবি দেখেছি, এবারে দেখব সামনে থেকে।

রূপকথা আর নীলাঞ্জনাও সমান উত্তেজিত, পিরামিড দেখবে বলে। এ এক অনন্য অনুভূতি , ঠিক বলে বোঝানো যায় না। কাছাকাছি আসতে দূর থেকে যা দেখা যাচ্ছিল এবার তা পরিষ্কার হল। বাস থেকে নামতেই দেখি সম্মুখে সেই বিস্ময়। পিরামিডের ফটো তুলতে লাগলাম আমরা। সামনে দাঁড়িয়ে সকলের ছবি নেওয়ার পর আমরা তিনজন ছবি তুললাম। পিরামিডের ভেতরে যাওয়া যাক চলো , বললাম আমি।
তুমি যাও, নীলাঞ্জনা বলল।

পিরামিডের ভিতরে কিছুই নেই, আহমেদ বলল। অনেক জিনিসপত্র চুরি হয়ে গিয়েছে, আর কিছু আছে কায়রো ন্যাশনাল মিউজিয়ামে। তার মধ্যে মমিও আছে ।

আমি আর কয়েকজন গিয়ে নামলাম একটা পিরামিডের মধ্যে। সামনে গার্ড বলে দিয়েছিল ভেতরে ছবি না তুলতে। খুব সরু জায়গা নিয়ে নামতে হয়। সত্যিই ভেতরে কিছু নেই। তবু পিরামিডের ভেতরে ঢোকা তো ! এক আলাদা ব্যাপার।

বাইরে এসে ওদের বললাম আমার অভিজ্ঞতার কথা। তারপর আবার ছবি তোলার পালা। ওখানকার লোকজন নানা রকমের জিনিস বিক্রি করছিল। আমরা কিনলাম কাঠের ফ্যারাও, রামেসিস, নেফারটিটি, আনুবিস, বেড়াল এইসব । দারুন সব জিনিস। খুব যে গরম লাগছে তা নয়। এর মধ্যে নীলাঞ্জনা আবার একজনের কাছ থেকে প্যাপাইরাস কিনতে লেগেছে। খুব সুন্দর সুন্দর অনেকগুলো প্যাপাইরাস কিনে নিল সে। সেগুলো সে বাঁধিয়ে সাজিয়ে রেখেছে।

এরপরে একটু দূরে স্ফিংস দেখা হল। বিশাল এর উচ্চতা। এই স্ট্যাচুর মাথা মানুষের মতো। আর অবয়ব সিংহের মতো। রয়েছে ফারাও খুফুর পুত্র ফারাও খাফরার পিরামিডের সামনে। প্রাচীন মিশরীয়রা বিশ্বাস করত যে এর রহস্যময় ক্ষমতা আছে।

এখানে পরিচয় হল এক মিশরীয় ভদ্রলোকের সঙ্গে। তিনি খুব ভালোভাবে কথা বললেন। এখানকার লোকজন ইংরেজি ভালোই বোঝেন। এবং ইংরেজিতে কথাও ভালোই বলতে পারেন। বেশ খানিকক্ষণ পিরামিড চত্বরে কাটানোর পর ম্যানেজার অভিজিৎ বলল, এবারে আমরা লাঞ্চ করে নেব।

লাঞ্চের পর রূপকথা বলল আহমেদকে , পিরামিডের গল্প শোনাবে না ?
আহমেদ হাসিমুখে বলল, নিশ্চয়ই শোনাব, কিন্তু এখন নয়। সন্ধ্যেবেলায়, হোটেলে গিয়ে।
ঠিক আছে।

এবারে আমরা গেলাম প্যাপাইরাস ইনস্টিটিউটে।

প্যাপাইরাস ফ্যাক্টরিতে ঢুকে দেখলাম বিশাল এক হলঘরে প্যাপাইরাসের ওপর আঁকা প্রচুর ছবি সাজানো রয়েছে। একজন মিশরীয় ভদ্রমহিলা আমাদের বোঝাতে লাগলেন কিভাবে প্যাপাইরাস তৈরি হয়, এবং হাতে-কলমে দেখাতেও লাগলেন । আমরাও মনোযোগ সহকারে দেখতে আর শুনতে লাগলাম।

এরপর আমরা ঘুরে ঘুরে সব ছবি দেখতে লাগলাম। নানা রকমের ছবি, দেবদেবী , ফ্যারাও, রানি এবং অন্যদের ছবি। সব ছবিই বেশ জমকালো, হায়ারোগ্লিফিকসে লেখাও আছে। আমরা কিনলাম কয়েকটা ছবি। আরো অনেকে কিনল। ছবির উপরে আমাদের নাম লিখিয়ে নিলাম হায়ারোগ্লিফিক্সে।

এবারে খাওয়ার পালা । স্থানীয় এক রেস্টুরেন্টে নিয়ে যাওয়া হল আমাদেরকে। কিন্তু খাওয়াটা একদমই জমল না। ওখানকার জাতীয় খাবার কুশারী খেলাম। এতে থাকে মিশরীয় ভাজা ভাত, পাস্তা, মুসুর ডাল, সেমাই এবং উপরে দেওয়া হয় ছোলা , ভাজা পেঁয়াজ, ভিনেগার, সস ইত্যাদি।

খাওয়ার সময় আহমেদ বলছিল প্যাপাইরাস সম্পর্কে। প্রাচীন মিশরীয়রা লিখত এই প্যাপাইরাস নামে নলখাগড়া থেকে তৈরি কাগজে। এই প্যাপাইরাস থেকেই পেপার কথাটা এসেছে। এই নলখাগড়া নীল নদের তীরে জন্মায় । মিশরীয়রা কাগজ ছাড়াও এই নলখাগড়া দিয়ে দড়ি, ঝুড়ি, নৌকা, জুতো প্রভৃতি তৈরি করত। এগুলি কেটে শুকিয়ে তারপর চাপ দিয়ে কাগজ তৈরি করা হত। এই কাগজ হত হালকা এবং টেকসই, এবং পাকিয়ে রাখা যেত। এর সাহায্যে বহু মূল্যবান তথ্য নথিবদ্ধ করা যেত।

মিশরীয়রা বুঝেছিল যে হিসেব রাখা এবং তথ্যের আদান প্রদান করা খুবই দরকার। তারা ছবি ও প্রতীকের মাধ্যমে নথিবদ্ধ করত, যা পরে এক রকমের লেখা য় পরিণত হয়, এবং হায়ারোগ্লিফস নামে পরিচিত হয়। গ্রীক ভাষায় হায়রোগ্লিফস মানে পবিত্র খোদাই করা জিনিস। এই প্রাচীন লেখার রীতিতে প্রায় ৭০০ অক্ষর আছে।

হায়ারোগ্লিফস তৈরি হয়েছিল বিভিন্ন জিনিসের ছোট ছোট ছবি থেকে। প্রত্যেক ছবির অর্থ ছিল কোন জিনিস শব্দ বা ধারণা। এক একটি ছবি এক একটি অক্ষর নির্দেশ করত। এবং এগুলি দিয়ে বিভিন্ন শব্দ তৈরি করে লেখা হত। ব্যাপারটা বেশ মজার ছিল। এছাড়াও অন্যান্য লিপিও চালু হয়েছিল, যেমন হায়াটিক এবং ডেমোটিক লিপি। এগুলি অপেক্ষাকৃত সহজ ছিল। পেপাইরাস কাগজ তৈরি করতে অনেক সময় ও পরিশ্রম লাগত। এটি অনেক দামীও ছিল। সেই জন্য অনেক সময়ই মাটির ফলক বা পাত্রের গায়ে লিখে রাখা হত।

প্রাচীন মিশরীয়রা লিখত নল খাগড়া থেকে তৈরি কলম দিয়ে। কলমের মুখ কেটে এবং চিবিয়ে লেখার উপযোগী করে তোলা হত। আর ব্যবহার হত কালো এবং লাল কালি। কার্বন, ঝুলকালি, এবং মিহি লাল মাটির গুঁড়ো থেকে কালি তৈরি হত।

বিখ্যাত রোসেটা স্টোন ছিল একটি পাথর, যার গায়ে পুরোহিতরা ফারাও সম্মানে কিছু লিখে রেখেছিলেন। একি লেখা হয়েছিল ১৯৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। এটি লেখা হয়েছিল দুটি ভাষায়। মিশরীয় এবং গ্রিক। এবং তিনটি লিপিতে। হায়রোগ্লিফিক, ডেমোটিক এবং গ্রিক। এটি এমনভাবে লেখা হয়েছিল যাতে পুরোহিতেরা, সরকারি কর্মচারীরা এবং মিশরের গ্রিক শাসকরা এই লেখা বুঝতে পারেন। এই পাথরটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর থেকে প্রাচীন মিশরীয় ভাষা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এটি একটি ব্যাসল্ট পাথরে তৈরি ব্লক, যার পালিশ করা গায়ে লেখা রয়েছে। এটি পাওয়া গিয়েছিল রশিদ নামক গ্রামে , যা ইউরোপিয়ানদের কাছে রোসেটা নামে পরিচিত ছিল। আবিষ্কার করেছিল ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়নের সেনাবাহিনীর একজন সৈনিক। এর লেখাগুলির পাঠোদ্ধারও করেছিলেন এক ফরাসী পন্ডিত। তার নাম ফ্রানকোস চ্যাম্পলিন। কোন কিছু পড়তে পারা, বুঝতে পারা বা সমাধান করাকে বলে ডিসাইফারিং।

এবারে যাওয়া হল কায়রো ন্যাশনাল মিউজিয়ামে। বাইরেই রয়েছে অনেক প্রাচীন মূর্তির রেপ্লিকা, সারকোফেগাস ইত্যাদি। আহমেদের সঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করলাম আমরা। ভেতরে ছবি তোলা নিষেধ। অনেক সুন্দর সুন্দর মূর্তি আছে এখানে। দোতলায় উঠে মামি রুমে ঢুকলাম আমরা। এই সেই বহুল আলোচিত মিশরের মমি। বইয়ে কত পড়েছি এর কথা। কেমন এক রোমাঞ্চ জাগল মনে। কতদিন আগেকার শরীর এখনো অনেকটাই অবিকৃত রয়ে গেছে। কী অসাধারণ পদ্ধতি প্রয়োগে সম্ভব হয়েছে এটা।

নীলাঞ্জনা আর রূপকথা ও মুগ্ধ বিষয়ে দৃষ্টিতে নিরিক্ষণ করছে মমিদের। সত্যি ভাবাই যায় না, বলল নীলাঞ্জনা।

কয়েকটা মমি আছে এখানে, যার মধ্যে আছে বিখ্যাত ফ্যারাও রামেসিস টু-র মমি, হাতসেপসুত প্রমুখের মমি। তাদের সঙ্গে রয়েছে কিছু জিনিসপত্র। বেশিরভাগ মমি ও জিনিসপত্রই চুরি হয়ে গিয়েছে।

রাতে ভয় পাবি না তো, জিজ্ঞেস করলাম রূপকথাকে। মোটেই না, বলল ও ।

মমি তৈরির ব্যাপারে পরে জেনে নিতে হবে । একটা দারুণ জিনিস দেখা হল , বললেন অমলবাবু ।


ক্রমশ ...


সাবস্ক্রাইব
অবহিত করুন
guest
0 টি মন্তব্য
ভোটপ্রাপ্তি অনুসারে
নতুন থেকে পুরোনো পুরোনো থেকে নতুন
ইনলাইন প্রতিক্রিয়া
সকল মন্তব্য দেখুন
Scroll to Top