তালিকা

আধুনিক বাঙালির ফেভারিট লোকেশ
অন্য দিগন্তের সন্ধানে


আমার আগের ধারাবাহিকের হেমন্ত সংখ্যা ছিল শেষ পর্ব। সামনের সংখ্যা থেকে নতুন ধারাবাহিক হিসেবে ভেবে রেখেছিলাম যে, আগের হিজলি শরীফ নিয়ে আরও বেশকিছু নতুন ইতিহাস এবং প্রকৃতির সন্ধান দেব। কিন্তু হঠাৎ করেই একটি ঘটনা বা জল - জঙ্গলময় স্বল্পচেনা সুন্দরবনের অন্যরকম একটি সফর নিয়ে তার আগে লিখবার জন্য হাতের কলম নিসপিস করছিল।

এবছর অর্থাৎ ২০২৫ এর জানুয়ারি মাসের শেষদিকে ( ২৮ - ২৯ - ৩০ ) আচমকাই এক ভোরের সকালে পিঠে স্যাক চড়িয়ে বেরিয়ে পড়লাম। বেহালা থেকে ভোর ৫টায় সুন্দরবনসংলগ্ন পাথরপ্রতিমা যাওয়ার সরকারী বাস। এলার্ম দিয়ে রাখা সত্ত্বেও, আমার ঘুম থেকে উঠতে প্রায় ১ঘণ্টা দেরী হয়ে গেল। ফলে একান্তই বাধ্য হয়েই আমাকে অতি ধীর এবং জঘন্য গতির একটি প্রাইভেট বাস ধরতে হলো।

প্রসঙ্গক্রমে জানিয়ে রাখি যে, সুন্দরবনের এই স্বল্পচেনা জায়গা বা গন্তব্য সম্বন্ধে ফেসবুকের পাতায় একটি নাতিদীর্ঘ লেখার বিবরণ পড়ে ভীষণই উৎসুক হয়ে উঠেছিলাম। তখন এখানে বাইরের মানুষ প্রায় যেতইনা। না ছিল থাকা - খাওয়ার জায়গা বা কোনও রকম হোটেল বা লজ। তারপর বহুদিন হয়ে গেল, মাঝে মাঝে এখানে যাওয়ার সুপ্ত বাসনা মনে জেগে উঠলেও, আর যাওয়া হয়ে ওঠেনি। গত একবছরে ইউটিউবে আলাদাভাবে বিভিন্ন ইউটিবারের ভিডিও ঘেঁটে ভাসাভাসা ভাবে যেটুকু জানতে পেরেছি, সেই ভরসাতে কিছুটা আগাম আন্দাজ করে, শেষমেষ হঠাতই এই বেরিয়ে পড়া।

তো, সেই বাস অবশেষে প্রায় ১টা নাগাদ গিয়ে পৌঁছল পাথরপ্রতিমা। সেখান থেকে আবার বাস পাল্টে খেয়া ঘাট। তবে, কেউ যদি সোজাসুজি ধর্মতলা বা হাওড়া থেকে গঙ্গারামপুর এর বাস ধরেন, তাহলে প্রায় সওয়া তিনঘন্টায় একেবারে জেটিঘাটের ঠিক মুখেই পৌঁছে যাবেন।

আমার যেহেতু যেতে দেরী হয়েছিল, সেহেতু জেটিঘাটে গিয়ে আমাকে বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছিলো ওপারে চাঁদমারি ঘাট যাওয়ার লঞ্চের জন্য। কারণ এর আগের লঞ্চ প্রায় ১ঘন্টার আগেই ছেড়ে চলে গিয়েছিল। বেলা ১, ৪০মিঃ নাগাদ পাথরপ্রতিমা ঘাটে লঞ্চ ভিড়লে, আমি দুতলায় না গিয়ে, লঞ্চের একতলার ভিতরে বসে যাই। পাঁচ - দশ মিনিট বাদেই লঞ্চ ছেড়ে দিলো।

লঞ্চ নদীর দুপাশের আধা ডুবন্তভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা ঘন ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ অর্থাৎ বাদাবনকে সঙ্গে নিয়ে চললো আমার আজকের নতুন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। এখান থেকে চাঁদমারি ঘাট পৌঁছতে পাক্কা সওয়া একঘন্টা, একটু থিতু হয়ে বসে, লঞ্চের ভিতরের চারপাশের গ্রাম্য সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে একজনকেও তথাকথিত আধুনিকতায় মোড়া শহুরে ট্যুরিস্ট বলে মনে হলনা। সবাই প্রায় গ্রাম্য সহজ সরল জীবন যাপনে অভ্যস্ত মানুষের দল।

এর মাঝে বলে নিই যে, বোহেমিয়ান মানুষের মত হুট করে অচেনা অজানা অপরিচিত জায়গায় পায়ে হেঁটে, প্রকৃতি আর মানুষের সাথে নিবিড়ভাবে নিজেকে জড়িয়ে, খেটে খাওয়া শ্রমজীবী বা চাষাভূষ মানুষকে একাত্মভাবে নিজের কাছে আপন করে বুকে টেনে নেওয়ার শিক্ষা আমি একজন সাহিত্যিকের কাছেই পেয়েছিলাম। তিনি আমার শ্রদ্ধেয় সাহিত্যিক সমরেশ বসু ।


ক্রমশ ...


সাবস্ক্রাইব
অবহিত করুন
guest
0 টি মন্তব্য
ভোটপ্রাপ্তি অনুসারে
নতুন থেকে পুরোনো পুরোনো থেকে নতুন
ইনলাইন প্রতিক্রিয়া
সকল মন্তব্য দেখুন
Scroll to Top